বিদেশে আসার পূর্বে মাথায় যে কত কিছু ঘুরপাক খাচ্ছিলো তার হিসেব নেই। এয়ারপোর্টে যেয়ে কি কি করতে হবে, ট্রেনে কিভাবে একা এতগুলো (এবং বড়) ব্যাগ-বোচকা নিয়ে উঠব, লোকজন কেমন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বড় দুঃচিন্তা ছিল কোথায় থাকবো! কারন যখন আমি প্লেনে উঠি তখনও আমার থাকার জায়গা ঠিক হয়নি! এর আগে বিদেশে বলতে শুধু ভারতে (অনেকের মতে এটি তো বিদেশ না কারন আমাদের দেশের সাথে এর তেমন কোন পার্থক্যই নেই) গিয়েছি, তাও আবার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক এবং অন্যতম শিক্ষাগুরু আখতার স্যারের সাথে, সুতরাং আমাকে কোন চিন্তাই করতে হয়নি। এবার পরিস্থিতি পুরো বিপরীত। কমনওয়েলথকে অনুরোধ করেছিলাম যে আমাকে ম্যানচেস্টারের বিমানের টিকিট না দিয়ে লন্ডনের টিকিট দিতে তাতে তাদেরও খরচ কম হত আর আমিও বিমানবন্দরে নেমে আমার আত্মীয়-স্বজন কারো দেখা পেতাম! সেটি নাকি তাদের পলিসি সমর্থন করে না! অতঃপর অনুরোধ করলাম বিমানের টিকিট নিউক্যাসল-এ দেবার জন্য কারন আমার গন্তব্য ডারহাম এর খুবই কাছের শহর এটি। ভাগ্য এবারও সহায় হলো না- তারা আমাকে প্রথম দিনই ট্রেনযাত্রা করিয়েই ছাড়বে!
অবশেষে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যার পর হাজির হলাম হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে। এতদিন বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বহুবার এই বিমানবন্দর দেখেছি, এর সামনে দিয়ে যাতায়াত করেছি, আজ এখান থেকে বিলাতে উড়াল দিবো! বিমানবন্দরে মানুষের ভীড় দেখে আমার যাবতীয় চিন্তাভাবনা কেমন যেন ভোতা হয়ে গেল। এত মানুষ! খালামনি সাথে থাকায় ভিআইপির মত সরাসরি ঢুকে গেলাম বিমানবন্দরের ভিতরে। সমস্ত কিছু সে-ই দেখিয়ে দিলো সুতরাং আমার তেমন কোন কিছুই করতে হলো না। অবশেষে রাত ৯.৪৫ এর প্লেন উড়াল দিল দেড় ঘন্টা দেরিতে রাত ১১.১৫ এ!
আমি বরাবরই ব্যস্ত শহর ঢাকা খুব একটা পছন্দ করি না কিন্তু ঐ রাত্রে ঢাকাকেও যেন আমার খুব আপন লাগছিলো! আকাশ থেকে রাতের ঢাকা যে এত সুন্দর লাগে সেটি কোনদিন করো কাছে শুনিনি, তবে মনের ভোতা অবস্থা তখনও কাটেনি। কারনটা বোধ হয় টেনশন! ইতোমধ্যে নতুন একটি টেনশন যুক্ত হয়েছে। ঢাকা থেকে প্লেন দেড় ঘন্টা দেরিতে যাত্রা শুরু করেছে, আমার ট্রানজিট আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবু ধাবিতে এবং পরবর্তী প্লেন মাত্র ২ ঘন্টা পরে। যেহেতু প্রথম প্লেনটি দেড় ঘন্টা দেরিতে ছেড়েছে সুতরাং আমি তখন মহা টেনশিত! অবশেষে পরবর্তী প্লেনের যাত্রা শুরুর সময়ের প্রায় ৪০ মিনিট পূর্বে আবু ধাবি এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম, প্লেন থেকে নেমেই দৌড়... যেতে হবে ৩নং টার্মিনালে। অবশেষে দৌড়ের এক পর্যায়ে দেখলাম এক ব্যাক্তি ম্যানচেস্টার ম্যানচেস্টার বলে ডাকছে, এক মুহূর্তের জন্য হলেও টেনশন উবে গেল। কিন্তু সেটির স্থায়িত্ব মাত্র কয়েক মিনিট! তিনি জানালেন যে আমাদের প্লেনটি দেরি থাকায় ম্যানচেস্টারের নির্ধারিত ফ্লাইট ইতোমধ্যে ছেড়ে গেছে এবং পরবর্তী ফ্লাইট পরদিন সকালে মাত্র ৮ ঘন্টা পরে! এবার যুক্ত হলো আরোও একটি টেনশন, এয়ারপোর্টে না হয় থেকে পরের দিন সকালে ফ্লাইট ধরলাম কিন্তু আমার যে ম্যানটেস্টার থেকে ডারহাম ট্রেনের অগ্রীম টিকিট কাটা আছে সেটির কি হবে! শুরু করলাম কমনওয়েথকে ইমেইল দেয়া! যথারীতি কোন উত্তর নেই। বুঝলাম যে তাদের পলিসিতে নেই!
সারারাত এয়ারপোর্টে কাটালাম। সময় যে খুব খারাপ কেটেছে তা বলবো না, টাকা থাকলে মানুষ কি করতে পারে এতদিন শুনে এসেছি আজ তার নমুনা দেখেছি। বিলাসী জীবনযাপন কিংবা ছুটি কাটানোর জন্য বহু নামীদামী লোকজন সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসে, কেন আসে তার ক্ষুদ্র একটি নমুনা দেখলাম এই এয়ারপোর্টে! একটি বিষয় দেখে খুব অবাক হলাম সেটি হলো এয়ারপোর্টের স্টাফদের একটি অন্যতম অংশ ভারতীয়! তারা যেভাবে হিন্দিতে কথা বলছিল তাতে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল যে পথ ভুল করে ভারতে চলে আসলাম নাকি!
আবু ধাবি থেকে ম্যানচেস্টারের ফ্লাইটের যাত্রী প্রায় সবাই শ্বেতাঙ্গ। বিকেলে পৌঁছালাম ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টে। এই তাহলে সেই রেড ডেভিলদের শহর! ছোটবেলা থেকেই আমি ফুটবলের অন্ধভক্ত, যদিও ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে আমার পছন্দের ক্লাব আর্সেনাল তারপরও ম্যান ইউ-এর তো নাড়ি নক্ষত্র আমার জানা। এয়ারপোর্টে নামার আগে চিন্তিত ছিলাম... একে তো বাদামী চামড়া তারপর আবার নামের সাথে বিশাল এক মুহাম্মদ আছে, কি যে করবে কাস্টমস-এ! কাউন্টারে বিশালদেহী এক বৃট্রিশ, জানতে চাইলেন কোথায় যাব? বললাম... সে শুনে খুবই সন্তুষ্ট বলে মনে হলেন! আর কিছু জানতে না চেয়েই ধুমধাম করে পাসপোর্টে সীল দিয়ে দিলেন। ধন্যাবাদ জানিয়ে চলে আসার সময় পিছনে থেকে মনে করিয়ে দিলেন যেন ১০ দিনের মধ্যে বি.আর.পি. সংগ্রহ করে নিই! ধারনারই বাইরে!!!
ব্যাগবোচকা পেয়ে গেলাম, অতঃপর মোবাইলের একটি সিম কিনতে হবে। জানি না কোথায় কি পাওয়া যায়! বিপদে উপরওয়ালা সবসময়ই দেখেন আমাকে! প্লেনের মধ্যে আরো এক বাংলাদেশী চাচার সাথে পরিচয় হয়েছিল। উনি উনার ভাইয়ের কাছে বেড়াতে আসছিলেন যুক্তরাজ্যে। উনার ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো, উনি আমাকে পাশের একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে নিজের টাকায়(!) সিম কিনে দিলেন এবং টপআপও করে দিলেন! এরপর রেলস্টেশনে যাব, কিভাবে, কোন দিকে কিছুই জানি না- শুধু জানি এয়ারপোর্টের আশেপাশে এবং খুব কাছে! এবারও ঐ চাচার ভাই আমাকে এক ব্রিটিশ মহিলার সাথে ট্যাগ করে দিলেন! মহিলার বয়স ৬০+ হবে এবং উনি যাবেন ইয়র্ক-এ। ইয়র্ক পৌছে আমারও ট্রেন পরিবর্তন করতে হবে। উনি অভয় দিলেন ‘কোন চিন্তা করো না আমি আছি, আমি তোমাকে দেখিয়ে দিব!’ তিনি নিজেই আমাকে রেলস্টেশনে নিয়ে গেলেন এবং কাউন্টারে আমার ট্রেনের অগ্রীম টিকিটটির ব্যাপারে অফিসারের কাছে জানতে চাইলেন, কারন আমার বিমান বিলম্ব থাকায় ইতোমধ্যে আমার ট্রেনের টিকিটটির তারিখে পরিবর্তন হয়ে গেছে! অফিসার জানালো এই টিকিট আর চলবে না, নতুন টিকিট কিনতে হবে এবং দাম মাত্র ৭০ পাউন্ড (৭০০০ টাকার আশেপাশে :()। উপায় নেই... অতঃপর টিকিট ক্রয় এবং ট্রেনে উঠলাম। এদেশের ট্রেন অনেক সুন্দর, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো যাত্রীরা খুবই সভ্য! আফসোস হলো দেশের ট্রেনের কথা ভেবে। আমার বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের ট্রেনগুলোও অনেক সুন্দর কিন্তু আমরা যাত্রীরা? দুদিন যেতে না যেতেই সীটের ফোমগুলো তুলে, জানালার কাচ ভেঙ্গে, বাথরুমে ঢুকে... আর না বলি...
যাহোক ইয়র্ক আসার পর স্টেশনে নামলাম। সেই ব্রিটিশ মহিলা আবারও আমাকে দেখিয়ে দিলেন কোন প্ল্যাটফর্মে যেতে হবে পরবর্তী ট্রেন ধরার জন্য। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে এমন ভাব করলাম যেন এটা কোন সমস্যাই না আমার কাছে! কিন্তু আমি তো অন্য প্ল্যাটফর্মে যাবার রাস্তা পাই না! দেশে হলে না হয় লাইনেই উপর দিয়ে (বাঙ্গালি যাত্রী না!) পার হয়ে যেতাম। আমি রাস্তা পাবার আগেই দেখলাম ট্রেন আসলো আবার চলেও গেল! কিন্তু এবার আমার টিকিট এনিটাইম টিকিট, সুতরাং নো প্রবলেম! যোকোন ট্রেনেই যেতে পারবো। অবশেষে পেলাম অন্য প্ল্যাটফর্মে যাবার রাস্তা! এবং অপর প্ল্যাটফর্মে পৌছেই দেখি ট্রেন হাজির। এই ট্রেনটি বেশ ফাঁকা। ডারহামে প্রায় পৌঁছে গিয়েছি আর একটু পরেই নামবো, আমি ব্যাগ নিয়ে গেটের পাশে রেডি। আমার পিছনে একজন ব্রিটিশ ভদ্রলোক ছিলেন, তিনি আমার ব্যাগ দেখেই বললেন ‘তুমি নেমে যেও আমি তোমার ব্যাগগুলো নামিয়ে দেব!’ চিনি না জানি না বলে কিনা আমার ব্যাগ নামিয়ে দেবে! আমি ধন্যবাদ দিয়ে বললাম যে আমি পারবো সমস্যা হবে না। কিন্তু তিনি আমাকে সাহায্য করবেনই! অবশেষে ডারহাম স্টেশনে পৌঁছার পর তিনি আমার বিশাল সাইজের দুটি ট্রলি ব্যাগই নিজে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়ে স্টেশনের বাইরের রাস্তায় ট্যাক্সি পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন! ব্রিটিশরা রাজার জাত জানি কিন্তু এতটা হেল্পফুল কেউতো কখনও বলেইনি!
অবশেষে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যার পর হাজির হলাম হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে। এতদিন বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বহুবার এই বিমানবন্দর দেখেছি, এর সামনে দিয়ে যাতায়াত করেছি, আজ এখান থেকে বিলাতে উড়াল দিবো! বিমানবন্দরে মানুষের ভীড় দেখে আমার যাবতীয় চিন্তাভাবনা কেমন যেন ভোতা হয়ে গেল। এত মানুষ! খালামনি সাথে থাকায় ভিআইপির মত সরাসরি ঢুকে গেলাম বিমানবন্দরের ভিতরে। সমস্ত কিছু সে-ই দেখিয়ে দিলো সুতরাং আমার তেমন কোন কিছুই করতে হলো না। অবশেষে রাত ৯.৪৫ এর প্লেন উড়াল দিল দেড় ঘন্টা দেরিতে রাত ১১.১৫ এ!
আমি বরাবরই ব্যস্ত শহর ঢাকা খুব একটা পছন্দ করি না কিন্তু ঐ রাত্রে ঢাকাকেও যেন আমার খুব আপন লাগছিলো! আকাশ থেকে রাতের ঢাকা যে এত সুন্দর লাগে সেটি কোনদিন করো কাছে শুনিনি, তবে মনের ভোতা অবস্থা তখনও কাটেনি। কারনটা বোধ হয় টেনশন! ইতোমধ্যে নতুন একটি টেনশন যুক্ত হয়েছে। ঢাকা থেকে প্লেন দেড় ঘন্টা দেরিতে যাত্রা শুরু করেছে, আমার ট্রানজিট আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবু ধাবিতে এবং পরবর্তী প্লেন মাত্র ২ ঘন্টা পরে। যেহেতু প্রথম প্লেনটি দেড় ঘন্টা দেরিতে ছেড়েছে সুতরাং আমি তখন মহা টেনশিত! অবশেষে পরবর্তী প্লেনের যাত্রা শুরুর সময়ের প্রায় ৪০ মিনিট পূর্বে আবু ধাবি এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম, প্লেন থেকে নেমেই দৌড়... যেতে হবে ৩নং টার্মিনালে। অবশেষে দৌড়ের এক পর্যায়ে দেখলাম এক ব্যাক্তি ম্যানচেস্টার ম্যানচেস্টার বলে ডাকছে, এক মুহূর্তের জন্য হলেও টেনশন উবে গেল। কিন্তু সেটির স্থায়িত্ব মাত্র কয়েক মিনিট! তিনি জানালেন যে আমাদের প্লেনটি দেরি থাকায় ম্যানচেস্টারের নির্ধারিত ফ্লাইট ইতোমধ্যে ছেড়ে গেছে এবং পরবর্তী ফ্লাইট পরদিন সকালে মাত্র ৮ ঘন্টা পরে! এবার যুক্ত হলো আরোও একটি টেনশন, এয়ারপোর্টে না হয় থেকে পরের দিন সকালে ফ্লাইট ধরলাম কিন্তু আমার যে ম্যানটেস্টার থেকে ডারহাম ট্রেনের অগ্রীম টিকিট কাটা আছে সেটির কি হবে! শুরু করলাম কমনওয়েথকে ইমেইল দেয়া! যথারীতি কোন উত্তর নেই। বুঝলাম যে তাদের পলিসিতে নেই!
সারারাত এয়ারপোর্টে কাটালাম। সময় যে খুব খারাপ কেটেছে তা বলবো না, টাকা থাকলে মানুষ কি করতে পারে এতদিন শুনে এসেছি আজ তার নমুনা দেখেছি। বিলাসী জীবনযাপন কিংবা ছুটি কাটানোর জন্য বহু নামীদামী লোকজন সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসে, কেন আসে তার ক্ষুদ্র একটি নমুনা দেখলাম এই এয়ারপোর্টে! একটি বিষয় দেখে খুব অবাক হলাম সেটি হলো এয়ারপোর্টের স্টাফদের একটি অন্যতম অংশ ভারতীয়! তারা যেভাবে হিন্দিতে কথা বলছিল তাতে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল যে পথ ভুল করে ভারতে চলে আসলাম নাকি!
আবু ধাবি থেকে ম্যানচেস্টারের ফ্লাইটের যাত্রী প্রায় সবাই শ্বেতাঙ্গ। বিকেলে পৌঁছালাম ম্যানচেস্টার এয়ারপোর্টে। এই তাহলে সেই রেড ডেভিলদের শহর! ছোটবেলা থেকেই আমি ফুটবলের অন্ধভক্ত, যদিও ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে আমার পছন্দের ক্লাব আর্সেনাল তারপরও ম্যান ইউ-এর তো নাড়ি নক্ষত্র আমার জানা। এয়ারপোর্টে নামার আগে চিন্তিত ছিলাম... একে তো বাদামী চামড়া তারপর আবার নামের সাথে বিশাল এক মুহাম্মদ আছে, কি যে করবে কাস্টমস-এ! কাউন্টারে বিশালদেহী এক বৃট্রিশ, জানতে চাইলেন কোথায় যাব? বললাম... সে শুনে খুবই সন্তুষ্ট বলে মনে হলেন! আর কিছু জানতে না চেয়েই ধুমধাম করে পাসপোর্টে সীল দিয়ে দিলেন। ধন্যাবাদ জানিয়ে চলে আসার সময় পিছনে থেকে মনে করিয়ে দিলেন যেন ১০ দিনের মধ্যে বি.আর.পি. সংগ্রহ করে নিই! ধারনারই বাইরে!!!
ব্যাগবোচকা পেয়ে গেলাম, অতঃপর মোবাইলের একটি সিম কিনতে হবে। জানি না কোথায় কি পাওয়া যায়! বিপদে উপরওয়ালা সবসময়ই দেখেন আমাকে! প্লেনের মধ্যে আরো এক বাংলাদেশী চাচার সাথে পরিচয় হয়েছিল। উনি উনার ভাইয়ের কাছে বেড়াতে আসছিলেন যুক্তরাজ্যে। উনার ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো, উনি আমাকে পাশের একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে নিজের টাকায়(!) সিম কিনে দিলেন এবং টপআপও করে দিলেন! এরপর রেলস্টেশনে যাব, কিভাবে, কোন দিকে কিছুই জানি না- শুধু জানি এয়ারপোর্টের আশেপাশে এবং খুব কাছে! এবারও ঐ চাচার ভাই আমাকে এক ব্রিটিশ মহিলার সাথে ট্যাগ করে দিলেন! মহিলার বয়স ৬০+ হবে এবং উনি যাবেন ইয়র্ক-এ। ইয়র্ক পৌছে আমারও ট্রেন পরিবর্তন করতে হবে। উনি অভয় দিলেন ‘কোন চিন্তা করো না আমি আছি, আমি তোমাকে দেখিয়ে দিব!’ তিনি নিজেই আমাকে রেলস্টেশনে নিয়ে গেলেন এবং কাউন্টারে আমার ট্রেনের অগ্রীম টিকিটটির ব্যাপারে অফিসারের কাছে জানতে চাইলেন, কারন আমার বিমান বিলম্ব থাকায় ইতোমধ্যে আমার ট্রেনের টিকিটটির তারিখে পরিবর্তন হয়ে গেছে! অফিসার জানালো এই টিকিট আর চলবে না, নতুন টিকিট কিনতে হবে এবং দাম মাত্র ৭০ পাউন্ড (৭০০০ টাকার আশেপাশে :()। উপায় নেই... অতঃপর টিকিট ক্রয় এবং ট্রেনে উঠলাম। এদেশের ট্রেন অনেক সুন্দর, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো যাত্রীরা খুবই সভ্য! আফসোস হলো দেশের ট্রেনের কথা ভেবে। আমার বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের ট্রেনগুলোও অনেক সুন্দর কিন্তু আমরা যাত্রীরা? দুদিন যেতে না যেতেই সীটের ফোমগুলো তুলে, জানালার কাচ ভেঙ্গে, বাথরুমে ঢুকে... আর না বলি...
যাহোক ইয়র্ক আসার পর স্টেশনে নামলাম। সেই ব্রিটিশ মহিলা আবারও আমাকে দেখিয়ে দিলেন কোন প্ল্যাটফর্মে যেতে হবে পরবর্তী ট্রেন ধরার জন্য। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে এমন ভাব করলাম যেন এটা কোন সমস্যাই না আমার কাছে! কিন্তু আমি তো অন্য প্ল্যাটফর্মে যাবার রাস্তা পাই না! দেশে হলে না হয় লাইনেই উপর দিয়ে (বাঙ্গালি যাত্রী না!) পার হয়ে যেতাম। আমি রাস্তা পাবার আগেই দেখলাম ট্রেন আসলো আবার চলেও গেল! কিন্তু এবার আমার টিকিট এনিটাইম টিকিট, সুতরাং নো প্রবলেম! যোকোন ট্রেনেই যেতে পারবো। অবশেষে পেলাম অন্য প্ল্যাটফর্মে যাবার রাস্তা! এবং অপর প্ল্যাটফর্মে পৌছেই দেখি ট্রেন হাজির। এই ট্রেনটি বেশ ফাঁকা। ডারহামে প্রায় পৌঁছে গিয়েছি আর একটু পরেই নামবো, আমি ব্যাগ নিয়ে গেটের পাশে রেডি। আমার পিছনে একজন ব্রিটিশ ভদ্রলোক ছিলেন, তিনি আমার ব্যাগ দেখেই বললেন ‘তুমি নেমে যেও আমি তোমার ব্যাগগুলো নামিয়ে দেব!’ চিনি না জানি না বলে কিনা আমার ব্যাগ নামিয়ে দেবে! আমি ধন্যবাদ দিয়ে বললাম যে আমি পারবো সমস্যা হবে না। কিন্তু তিনি আমাকে সাহায্য করবেনই! অবশেষে ডারহাম স্টেশনে পৌঁছার পর তিনি আমার বিশাল সাইজের দুটি ট্রলি ব্যাগই নিজে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়ে স্টেশনের বাইরের রাস্তায় ট্যাক্সি পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন! ব্রিটিশরা রাজার জাত জানি কিন্তু এতটা হেল্পফুল কেউতো কখনও বলেইনি!
No comments:
Post a Comment