মেইড ইন বাংলাদেশ!

আমরা সবাই কমবেশী এই গল্প শুনেছি যে বিদেশে থেকে বাড়ি ফেরার সময় আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অনেকেই অনেক দামী জামাকাপড় নিয়ে যান এবং পরবর্তীতে দেখা যায় এই জামাকাপড়ের সাথে ‘বাংলাদেশে তৈরী’ (মেইড ইন বাংলাদেশ) ট্যাগ লাগানো! গল্পটির মর্মার্থ হলো বাংলাদেশের (দেশের) জিনিস বিদেশ হতে অধিক দামে ক্রয় করে ঠকে যাওয়া! কিন্তু দেশের বাইরে আসার পর গত ক’মাস ধরে যা দেখছি তাতে এই ধারনা যে ভুল সেটি নিশ্চিত! অবশ্য অন্যান্য দেশের কথা বলতে পারবো না তবে যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে কথাটি অবশ্যই ভুল।

আজ ভোর (!) ৯.৪৫ এ জাম্বিয়ার এক সহকর্মী বাসায় হাজির। আমি যথারীতি তখনও বিছানায়! যদিও এখানে অফিস টাইম সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা, কিন্তু আমার কোন টাইম টেবল নেই! আমি সাধারণত অফিস শুরু করি ১১ টার আশেপাশে! আর ছুটির দিনগুলোতো মোটামুটি সারাদিনই কাটে বিছানায়! আজও ছুটির দিন ছিল, সুতরাং... যাহোক সহকর্মী ব্যাচারা বেশ কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে কোথাও যায়নি তাই তার আর ভাল লাগছিল না এবং সে কারনেই তার আগমন! কি আর করা... তাকে নীচতলায় বসার ঘরে বসালাম কিন্তু সে আমার ল্যাপটপ ব্যবহার করতে চায় কিছুক্ষণের জন্য, ইমেইল-এ কি একটি বিষয় আমাকে দেখাবে। তাকে নিয়ে এলাম দোতলায়... জানতে চাইলাম সকালের খাবার খেয়েছে কিনা, সে জানালো... না, খায় নি। সুতরাং এবার তাকে নিয়ে গেলাম রান্নাঘরে! যাইহোক ঠিক করলাম আমরা মিডলসব্রো (পাশের শহর, ১ ঘন্টা বাসে যাত্রা) যাবো ঘুরতে।

বান্দরবনের মেঘলায় তোলা...
মিডলসব্রো পৌঁছালাম ১২ টার দিকে। বাস স্টেশনের পাশের হিলস্ট্রিট মার্কেট। এখানে আসলে প্রতিবারই একবার ঢুঁ দেয়া হয় এবং আজও তার ব্যাতিক্রম হল না। এই মার্কেটেই প্রাইমার্ক- জামাকাপড়ের দোকান। দুজনই গেলাম সেখানে। গতবার যখন এসেছিলাম তখন অনেক প্রোডাক্টই ছিল বাংলাদেশের তৈরী, বাইরে এসে বাংলাদেশের নাম দেখতেও ভাল লাগে বোধ হয়! দেখা যাক এবার কি হয়। দোকানে ঢুকেই একটি জায়গায় এসে চোখ আটকে গেল! একটি তাকে অনেকগুলো গেঞ্জি দেখা যাচ্ছে যার মধ্যে অন্তঃত ৩টি আমি বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় ব্যবহার করেছি বলে মনে হচ্ছে! কাছে গিয়ে হাতে নিয়ে নিশ্চিত হলাম যে না একই জিনিস! দামের দিকে নজর পরতেই চোখ কপালে উঠার দশা, যাকে বলে চক্ষু চড়কগাছ... ৩.৫০ পাউণ্ড! বলে কি! বাংলাদেশে এগুলোর দাম দেড় হাজারের উপর, সম্ভবত ১৮০০ টাকা থেকে শুরু (যতদুর মনে পড়ে আমারগুলো ছিল বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি ব্রাণ্ড এর দোকান থেকে কেনা)। বর্তমান বাজারে এক ব্রিটিশ পাউণ্ড বাংলাদেশী টাকায় কমবেশী ১০০ টাকা, সুতরাং এই গেঞ্জিগুলো যুক্তরাজ্যে বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি প্রায় ৩৫০ টাকায়!

আরও একটি ব্যাপার না বললেই নয়... আমাদের দেশে এক্সপোর্ট-এর জিনিস বলে যেসব বিক্রি হয় তার দামও এখানের তুলনায় কয়েকগুন! আমরা দেশে বসে যারা এক্সপোর্ট জিনিস ভেবে খুব আগ্রহ সহকারে দাম দিয়ে কিনি তারা আসলে বেশি ঠকে যাই! খুবই কষ্ট পেলাম!!! একটু চিন্তা করুন এই গেঞ্জি যদি বিদেশে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয় তাহলে এর উৎপাদন খরচ কত? সাথে বাংলাদেশ হতে এখানে নিয়ে আসার পরিবহন খরচও আছে। এতকিছুর পরও তো যারা আমাদের দেশ হতে এগুলো অর্ডার দিয়ে বানিয়ে বিদেশে এই দামে বিক্রি করতে পারছে তারা তো অবশ্যই লাভও করছে। আর আমাদের দেশের দোকানগুলো! ব্যবসায় লাভ করা? সেটিতো করতেই হবে... তাই বলে এত! আর আমরা? দেশে বসে এক্সপোর্ট নাম শুনেই পাঁচগুন দামে কিনছি! সুতরাং দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশের জিনিসপত্র কিনে দেশে নেয়ার পরিকল্পনাটি কিন্তু মন্দ নয়!

No comments:

Post a Comment