রাজশাহীতে পাসপোর্ট: ক(অ) টু(২) জেড (খতম!)

অনেক দিন ধরেই পাসপোর্ট করবো করবো করছিলাম। অবশেষে চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দেবার উদ্দেশ্যে ব্যাংক ড্রাফটও করা হলো। অনেকে পাসপোর্ট করার বিষয়টি শুনলেই আঁতকে উঠেন! এই প্রক্রিয়ার অপর নাম দেয়া যেতে পারে বিড়ম্বনা বা দালাল প্রক্রিয়া। যাই হোক, যারা ব্যাংক ড্রাফট করবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি যে দুপুর ১টার মধ্যে ব্যাংক ড্রাফট করবেন কারণ তেনাদের ব্যাংকে (সোনালী ব্যাংক, করপোরেট শাখা, রাজশাহী; সাহেব বাজার বড় মসজিদের পাশে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংক ড্রফট করা যায়। একটু যদি দেরী করেছেন তাহলেই হয়েছে... আপনার খবর আছে নিশ্চিত, গার্ড থেকে শুরু করে সবাই আপনাকে একহাত নিয়ে নেবে এটা ১০১ ভাগ নিশ্চিত থাকেন (তবে যাদের মামা-চাচা আছে তাদের কথা আলাদা)। ব্যাংক ড্রাফট মাত্র ৩০০০ টাকা, তবে যারা জরুরীভাবে পাসপোর্ট করতে চান তাদের ক্ষেত্রে ৬০০০ টাকা।
টাকা জমা দেবার পর আপনাকে পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। পাসপোর্টের ফর্ম পাওয়া খুবই সহজ। যেকোন ফটোকপির দোকানে বা ইন্টারনেটে বাংলাদেশ সরকারের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে এটি পাওয়া যায়। এখানে উল্লেখ্য যে অনলাইনেও ফর্ম পূরণের মাধ্যমে এম.আর.পি. (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) এর আবেদন করা যায়। আবেদনের সময় যে সমস্ত কাগজপত্র লাগবে সে সংক্রান্ত কথাবার্তা পাসপোর্ট ফর্ম এর পিছনের দিকে (নির্দেশনা হিসেবে) লেখা আছে। উল্লেখ্য যে এই অংশটুকুই একজন আবেদনকারীকে বিভ্রান্ত করার জন্য যথেষ্ট! প্রয়োজনীয় সংযুক্তি ও অন্যান্য নির্দেশেনার ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ নিম্নরূপ-
  • আপনি যদি চাকুরীজীবী হন এবং যে পদেই থাকেন না কেন অবশ্যই আপনার প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে এন.ও.সি. (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) নিয়ে নেবেন।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের সনদের সাহায্যে পাসপোর্ট করতে হবেতবে যেকোন একটি উল্লেখ করাই ভালো। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদে কোন প্রাকার ভুল থাকা চলবে না। অর্থাৎ পাসপোর্ট ফর্মেও আপনাকে সেই তথ্য প্রদান করতে হবে (নিজের, বাবা, মা এর নামের বানান ও অন্যান্য)  যা পরিচয়পত্র বা জন্মসনদে উল্লেখ আছে। এক্ষেত্রে অনেকে ভুগতে পারেন আমার মতো... আমার জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবা-মা দুজনের নামের বানান ভুল থাকায় সেটির পরিবর্তে জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি।
  • কারো বাবা বা মা বা উভয়ই মারা গেলে যদি তাদের নামের পূর্বে মৃত লেখা থাকে তবে তা উল্লেখ করা যাবে না। অর্থাৎ শুধুমাত্র নাম লিখতে হবে। এক্ষেত্রে পেশার স্থানে মারা যাবার পূর্বে উনি যে পেশায় নিযুক্ত ছিলেন তা উল্লেখ করতে হবে।
  • পাসপোর্টের নির্দেশনায় যাদের নামে সংক্ষিপ্ত মোঃ বা মোসাঃ আছে তাদের পূর্ণরূপ ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে, যেমন মোঃ এর স্থানে মোহম্মদ। বিভ্রান্ত হবেন না এই নির্দেশনা পড়ে! আপনি যদি শিক্ষিত হন, অর্থাৎ আপনার যদি এস.এস.সি. পরীক্ষার সার্টিফিকেট থেকে থাকে তবে সার্টিফিকেট অনুযায়ী নাম লেখেন। তবে ফুলস্টপ দেয়া যাবে না। অর্থাৎ যাদের নামের বানানে MD. আছে তারা MD লিখবেন। আপনি যে শিক্ষিত সেটি প্রমাণের (!) জন্য আবেদনপত্রের সাথে এস.এস.সি. পরীক্ষার সার্টিফিকেটটি জুড়ে দিন। বাবা বা মায়ের নামের বানানেন ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
  • ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার রশিদের সিরিয়াল নম্বর লিখবেন না (যেটি পূর্বে হতেই দেয়া থাকে)। আপনাকে ব্যাংক থেকে হাতে লিখে রশিদের উপরে যে ক্রমিক নং দেবে সেটি উল্লেখ করুন।
  •  ফর্মে কাটাকাটি থেকে বিরত থাকুন।
  • সম্ভব হলে অনলাইনে/ইন্টারনেটে ফর্ম পূরণ করুন। এটি আপনাকে লাইনে দাঁড়ানো হতে বিরত রাখতে সাহায্য করবে কিছু ক্ষেত্রে। তবে অনলাইনে পূরণ করলে আপনাকে ফর্ম পূরণ শেষে যে পিডিএফ ফাইলটি দেয়া হবে সেখানে বেশকিছু তথ্য পূরণের স্থান ফাকা থাকবে। সেগুলি হাতে পূরণ করে নিন, যেমন আবেদনকারীর নাম (বাংলায়)।
ফর্ম জমা
সকাল সকাল পাসপোর্ট অফিসে চলে যান। তবে উপশহরে অফিস ভেবে আমার মতো ভুল করবেন না। সম্প্রতি অফিস স্থানান্তরিত হয়েছে শালবাগানে কাঁচা/মাছের বাজারের পিছনে। লাইনে দাঁড়িয়ে যান। তবে সরকারী চাকুরীজীবীরা লাইনে না দাড়িয়ে সরাসরি লাইনের সামনে যেয়ে যিনি ফর্ম প্রাথমিকভাবে চেক করছেন তার সাথে কথা বলে দেখতে পারেন। যদি তার দয়া হয় এবং আপনার ফর্মটি জমা নেন! অবশ্যই সাথে করে আঠা, কলম ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে যাবেন। ফর্ম জমা দেবার পর অপেক্ষার পালা। আপনাকে এরপর সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে দিবে যে তারিখে এসে আপনাকে পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলে যেতে হবে। তবে ব্যক্তিবিশেষে এখানেও এই নিয়মের তারতম্য হয়। আপনি দালালদের ১২০০ বা আশেপাশের অংঙ্কের টাকা দিলে ঐ দিনই ছবি তুলে সবকাজ করে নিশ্চিতে বাড়ি যেতে পারেন!
ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ
ছবি তোলার দিন আপনাকে প্রথমে অফিস থেকে জমা দেওয়া ফর্মটির একটি কপি দেয়া হবে। সেটি নিয়ে কম্পিউটার অপারেটরদের সামনে লাইনে দাড়িয়ে যান। এখানে আপনার হাতে পূরণ করা ফর্মটি অনলাইনে ডাটাবেজে অন্তভুক্তির কাজ করা হবে। তবে সহজেই এই ধাপটি আপনি পার করে পরবর্তী ধাপে যেতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রথমেই পাসপোর্ট ফর্মটি অনলাইনে পূরণ করতে হবে। তাহলে আর এখানে লাইনে দাঁড়াবার প্রয়োজন নেই, সরাসরি ফর্মটি নিয়ে ছবি তোলার রূমে চলে যান। তবে যারা হাতে লিখে ফর্ম পূরণ করবেন তারা অবশ্যই ৩-৫ ঘন্টা (!) হাতে নিয়ে যেয়ে এই ধাপটি সম্পন্ন করেন। কম্পিউটার অপারেটর আপনার ফর্মটি অনলাইনে পূরণ করার পর আপনাকে একটি প্রিন্ট দেবে যেখানে আপনাকে অতি সতর্কতার সাথে তথ্যগুলো সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। এরপর সেটি নিয়ে ছবি তোলার কক্ষে চলে যান।
ছবি তোলার সময় অতিমাত্রায় সেজেগুজে যাবার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়নি। আমিও মোটামুটি প্রিপারেশন নিয়ে গিয়ে যখন আমার ছবি তোলা হয় তখন দেখলাম শুধু গলা থেকে উপরের অংশ নেয়া হয়েছে! এবং সেটি দেখতে জাস্ট তালেবান বা অন্যান্য মুসলিম জঙ্গিবাহিনীর একজন সদস্যের মতোই! আপনাদের উদ্দেশ্যে আমার পাসপোর্টেরএকটি ছবিও দিয়ে দিলাম! এরপর আপনার স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হবে এবং সবশেষে আপনাকে একটি স্লিপ এবং তারিখ দিয়ে দেয়া হবে যেদিন আপনি আপনার পাসপোর্টটি অফিস থেকে নিয়ে আসবেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশন
এ ব্যাপারে আমার কিছুই বলার নেই। আপনি যে ফোন নম্বরটি (সেলফোন/মোবাইল নম্বর) ফর্মে উল্লেখ করবেন আপনাকে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার সেই নম্বরে ফোন দিবে এবং তাকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আপনার। কিভাবে তাকে ম্যানেজ করবেন সেটি আপনি চিন্তা করুন! তবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই যে আপনাকে এবিষয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। আমার ক্ষেত্রে কোন টাকা-পয়সা লাগে নি, অবএব...
অবশেষে পাসপোর্ট!
আপনাকে পাসপোর্ট অফিস থেকে দেয়া তারিখের উপর ভরসা করার প্রয়োজন নেই। আপনার পাসপোর্ট রেডি হয়ে গেলে আপনি আপনার মোবাইলে একটি এস.এম.এস পাবেন যে আপনার পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য রেডি হয়েছে। এছাড়া ইমেইল আইডি ফর্মে উল্লেখ করা থাকলে আপনি একটি ইমেইলও পাবেন। বাংলাদেশ আসলেই অনেক এগিয়ে গেছে সাম্প্রতিক সময়ে। মেসেজ বা ইমেল পেলে পরদিন অফিসে গিয়ে আপনার স্লিপটি জমা দিয়ে পাসপোর্টটি বুঝে নিন।


শেষকথা
ব্লগটি আমি যারা নতুন পাসপোর্ট করবেন মূলত তাদের উদ্দেশ্যে লিখেছি। আমি পাসপোর্ট করার পূর্বে অনলাইনে তথ্য ও অন্যের বেশ কটি ব্লগ পড়েছিলাম তাতে আমার অনেক উপকার হলেও কোন কোন প্রশ্নের জবাব পাই নি। এবিষয়গুলো আমি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদিও জানি না কারো কোন কাজে লাগবে কি না :P

2 comments:

  1. Eibar income tax return joma debar upor gyangorvo lekha de. Ami ei bapre toke info dia help korte parbo.

    ReplyDelete
  2. hoy hoy tore komune likhar somoy...

    ReplyDelete