এবারের কুরবানীর ঈদ (২০১৩)

বলতে বাধছে না যে ঈদ জিনিসটির মজা আমার কাছে অনেক কমে গেছে। ছোট বেলায় নানুবাড়িতে সেই মজায় ঈদ করতাম, আর এখন? এখন মজা মনে হয় ঈদের আগের দিনই বেশী। আগামীকাল ঈদ, কাল ঈদ একটা ভাব চলে আসে। গতবছর হতে একটি বিষয় লক্ষ্য করছি যে ঈদে পটকার ব্যাপকতা। আমি নিজেও পটকা বলতে পাগল! স্কুলে পড়া অবস্থায় ঈদের প্রাধান মজা ছিল পকেট ভর্তি করে পটকা নিয়ে বের হওয়া এবং সারাদিন সেগুলো ফুটানো। মাঝে বেশ কবছর পটকা ফুটানো একরকম বন্ধই ছিলো। ঈদে আমাদের সার্কেলের একটি নীতি ছিলো যেটি বর্তমানেও অনেকাংশে পালন করা হয়। ঈদে আমাদের আড্ডা হবে রাস্তায় রাস্তায়, এখানে সেখানে কিন্তু কারো বাড়ি যাবো না! 


এবারের ঈদে বেশ মজা করলাম। যদিও সবাই এই লেখাটি পড়ে মনে করতে পারে পাগলের প্রলাপ, এতে মজার কি হলো? কিন্তু আমাদের নিজেদের কাছে ঈদ মানেই নিজেদের মতো করে মজা করা। গতরাতে (চাঁদরাত) ঘুমাতে গিয়েছি প্রায় ৩:৩০ এর দিকে। সকালে ঈদের নামাজ ছিলো ৮:০০ টায়। মোবাইল ফোনে এ্যালার্ম দিয়েছিলাম ৬:৩০ এ, কিন্তু বিছানা ছাড়লাম ৭:২৫ এ! যথারীতি মনে হচ্ছিল ধুত ছাই, আর একটু ঘুমাতে পাড়লে কাজ হতো। যাহোক ঐ সময়ের মধ্যেই কোন রকমে সবকিছু করে গেলাম মসজিদে। নামাজের পরে প্রতিবারই বন্ধুদের অনেকের সাথে দেখা হয় কিন্তু এবার খলিল ছাড়া কাউকে পেলাম না। কুরবানির ঈদ, দ্রুত বাসায় ফিরে কুরবানী দিতে হবে। ফিরলাম বাসায়, কিন্তু আমার দ্বারা কুরবানী দেখা বা কাজ করা সম্ভব না। সহ্য করতে পারি না তা নয়, কিন্তু মন খারাপ হয়ে যায়। এবারে কুরবানীর জন্য আমার একটি খাসি ছিলো, উল্লেখ্য যে এটা আমার দ্বিতীয় কুরবানী, চাকুরী পাবার পরে দ্বিতীয় কুরবানির ঈদ পেলাম তো তাই। আমাদের বাড়ির নিচেই সাধারণত প্রতিবছর কুরবানী হয়, এবারও তাই হলো, এবং আমি সেখানে যথারীতি অনুপস্থিত। এদিকে গতরাতে ঘুম কম হওয়ায় আমার অবস্থা কাহিল, মনে হচ্ছে টাল খেয়ে পরে যাবো। আম্মু চা বানিয়ে দিলো, কিন্তু কিসের কি? কিছুক্ষণ পর আবার সেই একই অবস্থা। অবশেষে সবকিছু ফেলে বিছানায়! দুপুর ৩টার দিকে উঠলাম ঘুম থেকে! 

বিকেলে একটু গেম-টেম খেললাম। সন্ধ্যায় বাইরে যাবো, ইকবালকে ফোন দিলাম, ও আমাদের আড্ডার জায়গাতেই সবেমাত্র পৌঁছালো। বাড়ি থেকে বের হবো, এমন সময় শুরু হলো বৃষ্টি। যথারীতি মনে মনে বৃষ্টির বংশের উদ্ধার করলাম। অনেকক্ষণ এভাবে চলার পর বৃষ্টি একটু কমলে ছাতা নিয়েই বের হয়ে গেলাম। আড্ডাস্থলে পৌঁছানোর পর শুরু হলো, দেখি ওরা তাসখেলার পরিকল্পনা করছে। আর কি লাগে, দু/এক বছর আগেও আমাদের ঈদের প্রধান আকর্ষণ ছিলো সবাই একসাথে সারারাত জেগে রান্না, খাই-দাই, আর তাস খেলা! সাধারণত ঈদের পরের দিন রাতে আমরা এটি করতাম। বর্তমানে সব বন্ধ, কারণ বন্ধুরা সবাই বিয়ে করায় এখন আড্ডা বন্ধ, রান্না-বান্না সবই বন্ধ! রাত ১০দিকে একজন প্রস্তাব করলো চা খেতে যাবো পুলে (জাহাজঘাট)। জাহাজঘাট নাম শুনে আঁতকে উঠার কিছু নেই, শান্ত হোন। গেলাম সবাই মিলে, চা খেতে খেতে ১১টা বেজে গেল। সবাই তখন বললো এই চা এর সাথে পান না হলে পুরো মজা পাওয়া যাবে না সুতরাং পান খেতে হবে। কিন্তু আমি তো পান খাই না, কিন্তু আম্মুর জন্য একটি স্পেশাল পান নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে ১১। আশা করছি আগামী কালের আড্ডাটা ভালো জমবে।

No comments:

Post a Comment