ঘটনা কিছুদিন পূর্বের। আমাদের বাসার তৃতীয় তলার অসম্পূর্ণ কাজের জন্য মিস্ত্রী লাগানো হয়েছে, তারা সেখানে একটি পাখির বাসা আবিস্কার করেছে যেখানে ৪টি ডিমও আছে। একটি রুমের কোনায় কিছু বাঁশ একসাথে দাঁড় করানো ছিলো, পাখির বাসাটি এই বাঁশগুলোর উপরেই তৈরী। বিছানা থেকে উঠে বলতে গেলে চোখ ডলতে ডলতেই সেখানে হাজির হলাম। ডিমগুলো দেখেই চেনা চেনা লাগলো, আগেও আমি এই ধরনের ডিম দেখেছি, কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছিলাম না। অন্যরা কেউই বলতে পারছিলো না কি পাখির ডিম। হঠাৎই মনে হয়ে গেলো আমার বারান্দার একজন নিয়মিত অতিথির কথা, একটি দোয়েল পাখি! যে নিয়মিতই আমার ঘুম ভাঙ্গায়। প্রতিদিন সকালেই পাখিটি আমার জানালায় এসে ঠক ঠক করে কি যেন করে, একদিন এমন শব্দ শুনে জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই থাই কাচের ওপাশে একটি দোয়েলের দেখা মিললো। পাখিটি জানালার কাচের সাথে লেগে থাকা পোকামাকড় জাতীয় কিছু খাওয়ার জন্য উড়ে আসছে এবং জানালার কাচের সাথে তার ঠোটের সংস্পর্শের কারনে ঠক ঠক করে শব্দ হচ্ছে। সাথে সাথে মনে হলো এই ডিমগুলি ঐ দোয়েলেরই এবং সেই সাথে মনে পড়ে গেল যে আমি ডিমগুলো আগে কোথায় দেখেছি।
সেই ছোটবেলার কথা, বোধহয় ক্লাস ওয়ান/টুতে পড়ি, থাকতাম নানুবাড়িতে। আমাদের বাড়িতে (নানুবাড়ি) নতুন বিল্ডিং করা হচ্ছিলো। বিল্ডিংটির দরজা বা জানালা তখনও লাগানো হয়নি। জানালা লাগানোর জন্য দেয়ালের কিছু অংশ গর্ত করা ছিল, তারই একটি গর্তে দোয়েল ডিম দিয়েছিলো। সেখান থেকে বাচ্চাও ফুঁটেছিলো। আমার প্রতিদিনের রুটিন ছিল কয়েকবার করে সেগুলি পর্যবেক্ষণ করা। একদিন আবিস্কার করলাম বাসাটিতে পিপড়ার লাইন, লক্ষ্য করতেই দেখলাম যে ছানাগুলো আর জীবিত নেই! মিস্ত্রীরা দরজা-জানালা লাগানোর কাজ শুরু করেছে, এজন্য তারা সব জায়গায় কাজ করছিলো সেকারনেই হয়তো তাদের মা-বাবা বাসাতে আর আসতে পারেনি। বেশ মনে করতে পারি, সেদিন খুব মন খারাপ হয়েছিলো।
আজও এমন একটি জায়গায় পাখিটি বাসা করেছে এবং ডিম দিয়েছে যেখানে মিস্ত্রীরা কাজ করবে এবং তাদের ঐ বাঁশগুলোই প্রয়োজন। আমি মিস্ত্রীদের দলনেতাকে (হেড মিস্ত্রী) বলে কয়েকটি বাঁশ সেখানেই রেখে দিলাম এবং আরো কিছু কাঠের টুকরোও সাথে যোগ করে বাসাটির একটি ব্যবস্থা করে দিলাম। দুপুরের দিকে দেখতে গেলাম কি অবস্থা, যা দেখলাম তাতে আবারও সেই ছোটবেলার কষ্টদায়ক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। পাখির বাসাটি ডিমসহ ভেঙ্গেচুরে নিচে পড়ে আছে এবং সেখানের বাঁশগুলো নেই। মিস্ত্রীদেরই কেউ একজন সেখান থেকে বাঁশগুলো সরিয়েছে, সে লক্ষ্যই করেনি যে তার উপরে পাখির বাসাটি ছিলো...
এখন আর আমার জানালার কাঁচে কেউ ঠকঠক শব্দ করে না...
আজও এমন একটি জায়গায় পাখিটি বাসা করেছে এবং ডিম দিয়েছে যেখানে মিস্ত্রীরা কাজ করবে এবং তাদের ঐ বাঁশগুলোই প্রয়োজন। আমি মিস্ত্রীদের দলনেতাকে (হেড মিস্ত্রী) বলে কয়েকটি বাঁশ সেখানেই রেখে দিলাম এবং আরো কিছু কাঠের টুকরোও সাথে যোগ করে বাসাটির একটি ব্যবস্থা করে দিলাম। দুপুরের দিকে দেখতে গেলাম কি অবস্থা, যা দেখলাম তাতে আবারও সেই ছোটবেলার কষ্টদায়ক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। পাখির বাসাটি ডিমসহ ভেঙ্গেচুরে নিচে পড়ে আছে এবং সেখানের বাঁশগুলো নেই। মিস্ত্রীদেরই কেউ একজন সেখান থেকে বাঁশগুলো সরিয়েছে, সে লক্ষ্যই করেনি যে তার উপরে পাখির বাসাটি ছিলো...
এখন আর আমার জানালার কাঁচে কেউ ঠকঠক শব্দ করে না...
No comments:
Post a Comment