প্রথমবার
জয়পুরহাট গিয়েছিলাম ২০০৬ সালের ২৯ আগস্ট। আমার বন্ধু সাখাওয়াতদের বাড়িতে
সেবার ছিলাম ৫দিন! মনে আছে এই কয়দিনেই আন্টির হাতের রান্না খেয়ে ওজন বেড়ে
গিয়েছিলো প্রায় ২ কেজি! এরপর অনেকবারই কাজের উদ্দেশ্যে জয়পুরহাট যাওয়া
হয়েছিলো, কারণ পাঁচবিবিতে আদিবাসীদের সাথে ১ বছর কাজ করতে হয়েছে। যার কারণে
জয়পুরহাটের প্রতি আকর্ষণটা দিন দিন বেড়েছে। পরবর্তীতে আর একবার পূঁজার সময়
সবাই মিলে গিয়েছিলাম জয়পুরহাট, উদ্দেশ্য, নিপাদের বাড়িতে পূঁজার যাবতীয়
অসাধারণ স্বাদের পদসমূহ ভক্ষণ ও পাহাড়পুর ভ্রমণ। এরপর বছর খানেকেরও বেশী
সময় আর সেভাবে যাওয়া হয়নি জয়পুরহাট। এবার আবার জয়পুরহাট বেড়ালাম (৬-৮
মার্চ, ২০১৩) আমার বান্ধবী পপির বিয়ে উপলক্ষ্যে।
জীবনে অনেক ইচ্ছে ছিলো হিন্দু সম্প্রদায়ের কারো বিয়ে সরাসরি দেখার। এর আগে বেশকিছু সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে সময়ের অভাবে, তাই এবার আর মিস করতে চাই নি। সরাসরি বরেন্দ্র ধরে আমি আর ফাহাদ হাজির অনুষ্ঠানে। ট্রেনেও বেশ মজা হলো, ৮ জনের বাথে আমরা মাত্র ৪ জন! তাই শুয়ে-বসে মজা করতে করতে গেলাম। বিয়ের আগের দিন সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ব্যাপক মজা হলো। ৭ তারিখ রাতে মূল বিয়ে। সারাদিনই হরতাল ডেকেছে বিএনপি, সাথে ১৪৪ ধারা দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। পরিকল্পনা ছিলো আমরা সকাল বেলায় সবাই মিলে পাহাড়পুর, সব বাদ! পরিবর্তে গেলাম জ্যোতিদের বাসায়, ও সেই ভোর (আমাদের কাছে, অন্যদের কাছে না!) থেকে আমাদের ফোন দিয়ে যেতে বলতে বলতে এক পর্যায়ে আমাদের রিমাণ্ডে নেয় আর কি... যাহোক ওদের বাসায় কাস্টার্ড, আন্টির হাতের মোগলাই পরটা আর আমাদের জন্য সকালে রান্না করা জ্যোতির নুডুলস (আমাদের দেরীর কারণে ঠাণ্ডা খেতে বাধ্য হয়েছি) এর স্বাদ অনেকদিন মনে থাকবে। ফাহাদ তো মোগলাই খেয়েই ফিদা!
দুপুরের
পর সেখান থেকে গেলাম নিপাদের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে। বাপড়ে বাপড়ে বাপ!
বিয়েতে কণের আর কি করতে হয়! কণের বাবা-মা এর পরিশ্রম দেখেই মাথা খারাপ।
আসলেও দেখার মতো অনুষ্ঠান, না দেখলে সারা জীবন আফসোস করতে হতো। হয়তো
বুঝতামই না কি মিস করেছি। বিয়ের লগ্ন ছিলো রাত ৯:৩০ থেকে। বিয়ে শেষ হতে
হতেই রাত ১টা বাজলো। আমি আর ফাহাদ তখনই রুমে ফিরলাম। খুব মন খারাপ
লাগছিলো... কাকু মেয়ে সম্প্রদান করার সময় কেঁদে ফেলেছিলো... পরিবেশটা
সত্যিই বেদনার। ৮ তারিখ সকালে আবার গেলাম নিপাদের বাসায়, আজ বাসী বিয়ে।
ওয়াও! সত্যিই অসাধারণ... সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই সংস্কৃতি যে এতো আকর্ষণীয়
হতে পারে পূর্ব হতেই আমার একটু ধারণা ছিলো, কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখলাম।
ইতোমধ্যে আমার অনবরত হাঁচি শুরু হয়ে গেছে... কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা গেল না। আমার আর ছবি তোলা হলো না... আমাদের সাধের ক্যানান ডিএসএলআর টা ফাহাদকে দিয়ে বললাম যে তুমি বাকী অনুষ্ঠানটা কাভার করো। বিকেলের দিকে বরপক্ষ নববধুকে নিয়ে চলে গেল। আগামীকাল বরের বাড়িতে অনুষ্ঠান। তবে আমাদের আর সেখানে যাওয়া হবে না, ফিরে আসতে হবে রাজশাহী। আমি আর ফাহাদ সন্ধ্যায় চলে এলাম জয়পুরহাট রেলস্টেশনে। এই রেলস্টেশনে প্রথমবার যখন এসেছিলাম তখন একটি মজার(?) অভিজ্ঞতা হয়েছিলো যা নিয়ে জনপ্রিয় দৈনিক দি ডেইলী স্টারের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন দি স্টার এ একটি লেখাও লিখেছিলাম। তিতুমীর (ট্রেন) প্রায় ৪৫ মিনিট দেরীতে চলছিলো, ইতোমধ্যে আমার হাঁচি গলাব্যাথার কারণ হয়ে গেছে এবং আমার অবস্থা যথারীতি কাহিল। এর সাথে যোগ হলো চলন্ত ট্রেনের বাতাস! কি ভাগ্য আমার... টিকিট করতে গিয়েছিলাম প্রথম শ্রেণীর কিন্তু এই ট্রেনে প্রথম শ্রেণী নেই... বাধ্য হয়ে শোভন শ্রেণীর টিকিট ক্রয় করতে হয়েছে এবং সিট নম্বর আমিই চেয়ে নিলাম (জানালার ধারে), ট্রেনে ওঠার পর দেখা গেল আমার সিটের পাশের জানালা ফিক্সড, খোলাই থাকে, বন্ধ হয় না! হা হা হা... যাহোক রাজশাহী স্টেশনে যখন পৌঁছলাম তখন ঘড়িতে সময় রাত ১১:১৫। অনেকদিন পর বেশ মজা করে কোথাও ঘুরে এলাম...
No comments:
Post a Comment