টাইমস হায়ার এডুকেশন ইমপ্যাক্ট র‌্যাংকিং-এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আজ “টাইমস হায়ার এডুকেশন” এর “ইমপ্যাক্ট র‌্যাংকিং” প্রকাশিত হয়েছে, প্রথমবারের মত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এতে স্থান করে নিয়েছে, বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থান যৌথভাবে ৯ম, বিশ্বে ১০০১-১৫০০ এর মধ্যে। এবার এই র‌্যাংকিং-এ ১২৫ দেশ হতে ২১৫২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে, সেই হিসেবে আমরা মাঝামাঝি একটি অবস্থানে আছি। উল্লেখ্য যে, “ইমপ্যাক্ট র‌্যাংকিং” এর ভিত্তি হল UN-এর Sustainable Development Goals (SDGs). একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭টি SDG-এর বিপরীতে কেমন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং সেগুলির ফলাফল বিবেচনায় নিয়ে এই র‌্যাংকিংটি করা হয়ে থাকে। সুতরাং এই র‌্যাংকিংয়ে ভাল অবস্থান মানেই যে পড়াশুনা বা গবেষণা খুব ভাল বিষয়টি সেরকম নয়, বরং টেকসই, পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রমে আমরা কি অবস্থায় আছি সেই বিষয়টি এই র‌্যাংকিং হতে বোঝা যায়। গত বছরের (২০২৩) নভেম্বরের শুরুতে যখন ইমপ্যাক্ট র‌্যাংকিং এর জন্য ডাটা সাবমিট করেছিলাম তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে আমরা কোথায় আছি আর দুনিয়া কত এগিয়ে গেছে... রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সম্ভবত প্রধান সমস্যা কোন গোছানো তথ্যভাণ্ডার! বিচ্ছিন্ন তথ্যগুলিকে একসাথে করে উপস্থাপন করাই বড় চ্যালেঞ্জ...। আমাদের দেশের নতুন সরকারী বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলির এখানে বেশ এগিয়ে থাকার কথা। র‌্যাংকিংয়ের কাজ করার পর উপলব্ধি হয়েছে, কত সিম্পল কিছু কাজ বা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এইসব র‌্যাংকিংয়ে একটি তুলনামূলক ভাল অবস্থান করে নেয়া সম্ভব। তবে চ্যালেঞ্জও অনেক... যাইহোক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যের নেতৃত্ব ও উৎসাহে কাজগুলি গতবছরের শেষ পর্যন্ত অফিসের মাত্র দুজন অফিসার নিয়ে এই বিপুল কর্মযজ্ঞ একাই করে যাচ্ছিলাম, বিষয়টি অনুধাবন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন অত্যন্ত সুযোগ্য পরিচালক নিয়োগ দিয়েছেন, যাতে করে আমাদের অফিসের কর্মপরিধিও বেড়েছে। আশা করছি আমাদের এই কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আরও ত্বরান্বিত হবে, সকলের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা আরও এগিয়ে যাব... পরিশেষে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, যদিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থান ১০০১-১৫০০ এর মধ্যে কিন্তু SDG-17 Life below water ক্যাটেগরিতে (আমার বিভাগ যে ক্যাটেগরিতে পড়ে আর কি...) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪০১-৬০০ এর মধ্যে...

কফি!


বিশ্ববিদ্যালয় (ছাত্র) জীবনে সম্ভবত আমার সবচেয়ে আপনজন ছিল এই কফি! শনি-বৃহস্পতি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলতো বিভাগের ক্লাস, কখনও কখনও আরও দেরী। বাসায় ফিরে একটু পর আবার বন্ধুদের সাথে আড্ডা, রাতের খাবার শেষে বোধহয় রাত ১২টার আগে কখনও বইপত্র নিয়ে বসতে পারি নি। এই রাতেই আমার নিরবিচ্ছিন্ন সঙ্গী হতো কফি! সে অর্থে বলতে গেলে আমার একাডেমিক বা রিসার্চ ক্যারিয়ারের যাবতীয় সাফল্যের পিছনে এই কফি!

রাত জাগার অভ্যেস ছাড়তে পারিনি; চেষ্টা যে করিনি তা নয়, বহুবার ঘটা করে ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠে দিন শুরু করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি- শুরুতে দুএকদিন কাজ হলেও কদিন পরেই ‘যে লাউ সেই কদু’ দশা। আমার জন্য ফজরের পরে বিছানায় যাওয়াটিই বেশি স্যুট করে! কর্মজীবনের প্রায় ১২ বছরেও যাবতীয় কাজই করেছি এই রাতেই, সাথে ছিল বিভিন্ন ব্রাণ্ডের কফি! কফি জিনিসটা আমার জীবনে একরকম শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে! বিদেশ থেকে সবাই ব্যাগ ভর্তি করে কত কি নিয়ে আসে, আমিও আনতাম... তবে জারের পর জার ভর্তি Douwe Egberts! 

বিয়ের পর বউকে আর কিছু শিখাতে পেরেছি কি না জানি না কিন্তু এই কফি যে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে সেটি মোটামুটি নিশ্চিত! স্বাভাবিক সময়ের বাইরে প্রতিরাতে ২-৩টার মধ্যে কফি খাওয়া আমাদের বোধহয় অদ্ভুত স্বভাবগুলির একটি! রাজশাহীর বাইরে কোথাও গেলেও সর্বপ্রথম আমি যে জিনিসটি খুঁজি, সেটি সম্ভবত কোথায় কফি পাওয়া যাবে! 


আজ হঠাৎ মাঝরাতে এসে মনে হলো এই কফিকে একটু ক্রেডিট দেয়া দরকার...


 

বি.দ্র. বউ এক মাসের জন্য ট্রেনিংয়ে রাজশাহীর বাইরে...



উন্নত বিশ্বে উচ্চশিক্ষা ও জীবনযাপন সহজ করার কিছু টিপস

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া যাবে এ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি থাকলেও এখানে যে বিষয়টি নিয়ে আজ লিখছি সেটি হয়ত কিছুটা অতিরিক্ত, কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় বিষয়াবলী এবং এগুলো কারো আয়ত্তে থাকলে ভিনদেশে তার উচ্চশিক্ষা এবং জীবনযাপন অনেকটাই ডালভাত হয়ে যাবে এবং রীতিমত উপভোগ করতে পারবে। এটি অবশ্যই সঠিক যে উন্নত বিশ্বে উচ্চশিক্ষা (মাস্টার্স এবং পিএইচডি, তবে বিশেষ করে পিএইচডি) সম্পন্ন করা দেশের থেকে অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং ‘সম্ভবত’ খুব কঠিন। আমি ‘সম্ভবত’ শব্দটি ব্যবহার করেছি কারণ এই কঠিনতার বিষয়টি নির্ভর করবে আপনার নিজস্ব গুণাবলী এবং দক্ষতার উপর। আমি বাংলাদেশে প্রায় সকলের মুখেই শুনেছি যে (যারা দেশের বাইরে ডিগ্রী নিয়েছেন) যে বাইরে ডিগ্রী করা খুব কঠিন। আমার নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণ আছে এবং আমার মনে হয় এসকল বিষয় আয়ত্তে থাকলে কারো জন্যই বাইরে ডিগ্রী করাটা তেমন কঠিন কিছু না, অন্তত আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতায় তা মনে হয় নি।

স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি টিচার

শিক্ষক হবার সুবাদে আমি বরাবরই আমার ছাত্রছাত্রীদের বই পড়তে উপদেশ এবং পরামর্শ দিয়ে থাকি যার কারণে আমার অনেক ছাত্রছাত্রী হয়তো আমাকে তেমন ‘স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি’ শিক্ষক হিসেবে পছন্দ করে না। ‘স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি’ শব্দটি আমার নিজের বিভাগে (ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) উৎপত্তি লাভ করলেও সঠিকভাবে মনে করতে পারছি না এই শব্দটির প্রবর্তক কে, তবে খুব সম্ভবত আমার বন্ধু ও সহপাঠী অংকুর। আমরা কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শিক্ষকদের এই দলের অন্তর্ভুক্ত করতাম যার মধ্যে একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ‘ছাত্রছাত্রীদের নোট সরবরাহ করা’। অর্থাৎ শিক্ষক ক্লাসে তার কোর্সের নোট সরবরাহ করতেন। এটি হতে পারে খুবই ভালো একটি পদ্ধতি যেখানে বইপত্রসহ অন্য সকল সুবিধাদির অভাব রয়েছে! তবে মুদ্রার যেমন অপর পিঠ থাকে তেমনি এই পদ্ধতিরও উল্টোদিক আছে। এই ধরনের শিক্ষকদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল তারা গণহারে সবাইকে মাত্রাতিরিক্ত নম্বর দেন (জিপিএ ফাইভ টাইপ), যাতে করে তারা ছাত্রছাত্রীদের কাছে নিজের খুবই ভাল ইমেজ ধরে রাখতে পারেন। অবশ্য অনেক শিক্ষকও সারাবছর ক্লাস না নিয়ে কিন্তু পরীক্ষায় ঢেলে নম্বর দিয়ে এই ইমেজ ধরে রাখেন এবং নিজের ফাঁকিবাজি হালাল করেন। এতে করে কি প্রকৃত মেধাবীদের অবমূল্যায়ন করা হয় না? যাই হোক, এগুলো তিতা কথা... ভাল লাগবে না।